ক্রাইম

আমার ব্যাটাতো রাজনীতি করে না-তাইলে পড়াইয়া মারলা ক্যান!

প্রকাশ: 12 November, 2025 • 0 বার পঠিত

আমার ব্যাটাতো রাজনীতি করে না-তাইলে পড়াইয়া মারলা ক্যান!
আবু সাঈদ
বিশেষ প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কৈয়ারচালা গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। জমির মাঝে টিনের ছোট ঘরে চলছে কান্নার আহাজারি। সেখানে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন সাজেদা আক্তার। বুক ভেঙে তার আর্তনাদ ‘আমার ছেলে রাজনীতি করত না। রাজনীতি করতো না।। তাহলে কেন ওকে বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হলো? এখন আমি কী খেয়ে বাঁচব? কিস্তি দিতে না পারলে তো মাইনসে আমারে জেলে ভরবো।। আল্লাহ ছাড়া এখন আমাদের কেউ নাই।’

গত সোমবার দিবাগত রাতে ‘আলম এশিয়া’ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তখন বাসের ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন চালক জুলহাস উদ্দিন (৩২)। আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে।


জুলহাসের মায়ের বক্তব্য উঠে এসেছে তিনটি এনজিও থেকে নেওয়া তিন লাখ টাকা ঋণের কিস্তির বিষয়। বছরখানেক আগে এনজিও এবং স্বজনদের কাছ থেকে আরও তিন লাখ টাকা ধার করে নতুন বাড়ি করেন সাধারণ বাসচালক জুলহাস উদ্দিন। সেই ঋণ এখনও শোধ হয়নি। এর মধ্যেই গত সোমবার দিবাগত রাতে বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা জুলহাস পুড়ে মারা যান।পাশাপাশি মারা যান তার পরিবারের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন।

মায়ের কেনা জমিতে ঘর তোলার পর বিয়ে করেছিলেন জুলহাস। স্ত্রী জাকিয়া আক্তার মাত্র এক বছরের মধ্যেই এখন বিধবা। তিনি জানান, ৫ শতাংশের একটি ভিটামাটি ছাড়া আর সম্পত্তি বলে কিছু নেই। এখন কে নেবে তাদের দায়িত্ব?

অল্প আয়েই চলছিল তাদের নতুন সংসার। মাসে সব মিলে ১৫-১৬ হাজার টাকা আয় হতো তার। এই টাকা দিয়েই ৩-৪ জনের সংসার চালাতেন তিনি। মাঝে মাঝে ছোট বোন ময়নাকেও সহায়তা করতেন জুলহাস। আগেই বাবা মারা গেছেন তার। বার্ধক্যে উপনীত মায়ের সংসারে এখন আর কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি রইল না।

আলম এশিয়া’ পরিবহনের চালক ছিলেন জুলহাস। ভালুকজান ইসলাম পেট্রোল পাম্পের কাছাকাছি গত সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে পেট্রোল ঢেলে বাসটিতে আগুন।

বোন ময়না আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই আমগোর সংসারের একমাত্র ভরসা। আমার ভাই তিনটা কিস্তি চালাইত। এহন কিস্তি চালানোর টাকা কই পাইয়্যাম?
সংসারই বা কেমনে চলবো? আমরা কারে ভাই ডাকমু গো; কেডা আমার মারে এহন খাওয়াইবো গো।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী কালাম বলেন, এক মুহূর্তে একটি পরিবার চরম অসহায়ত্বের মুখে পড়ে গেছে। মা, বোন ও স্ত্রী– এই তিন নারীর জীবন পুরোপুরি অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ঢেকে গেছে। অসহায় পরিবারটির জন্য সমাজের মানবিক সাহায্য একান্ত প্রয়োজন।

​বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ময়মনসিংহের মোটরযান পরিদর্শক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, জুলহাস মিয়া নিবন্ধিত চালক ছিল কিনা– এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। যদিও এটি নাশকতা, তবুও সরকারের পক্ষ থেকে সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী নিহত চালকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বা আর্থিক সহায়তার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আমরা দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে পরিবারটিকে সংশ্লিষ্ট সরকারি কল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সহযোগিতার চেষ্টা করব।

শেয়ার করুন